রোজার তাৎপর্য ও ফজিলত: দ্বিতীয় পর্ব
একাত্তর কন্ঠ
আপডেট সময়: ২ মে ২০২০ ১০:০৭ এএম:

মাহে রমজান সিয়াম সাধনা ও তাকওয়ার মাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্ম গঠনের মাস,কল্যাণ ও বরকতের মাস, রহমত ও মাগফিরাত এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভের মাস। মহান আল্লাহ এই মাসটিকে বহু ফজিলত ও মর্যাদা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন।ফলে সারা বিশ্বের মুসলমানদের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়। মুমিন বান্দার জীবনে বছরের মধ্যে রমজান মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয়। এ কারণেই বলা হয় পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে ইবাদত ,কুরআন তেলাওয়াতে, জিকির ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ মৌসুম ।
রাসূল (স) বলেছেন, "এ মাস বড়ই বরকতের মাস ।আল্লাহ তায়ালা বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাস রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন ও দোয়া কবুল করেন"।
রোজাদারের মর্যাদা
"""""""""""""""""""""""""""""""""
রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন "মানুষ যত প্রকার নেক কাজ করে আমি তার সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেই । কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম।কেননা রোজার সওয়াবের পুরস্কার স্বয়ং আমি আল্লাহই প্রদান করব অথবা আমি নিজেই রোজার পুরস্কার হয়ে যাব"।
এ মাসে নফল ও ফরজ এর ফজিলত
"''''''''''''''''''''"'"'""'"""""''"''""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল (স)বলেছেন , "যে ব্যক্তি এ মাসে কোন ১ টি নফল কাজ করল সে যেন অন্য মাসে ১ টি ফরয আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন ১ টি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০ টি ফরজ আদায় করল ।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা রাখার ফজিলত
''"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল (স) বলেছেন,"যারা রমজান মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে তারা ঐদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপ রূপে প্রসব করেছিলেন"।
রোজা গুনাহসমূহ কে জ্বালিয়ে দেয়
"""""'"""''''"'''''''"'""""""""""'"""""""""""""""""""""
রাসূল (স)বলেছেন,"আগুন যেমন লাকড়ি সমূহকে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়,অনুরূপভাবে রমজান মাসে যে রোজা রাখবে তার রোজা যদি সঠিক হয় তাহলে গুনাহসমূহ কে জ্বালিয়ে ভস্ম দেয়।
রোজা গুনাহের কাফফারা এবং ক্ষমা লাভের কারণ
"""""""'''''''''''''''''''''''''''""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল (স)বললেছেন,"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে (বুখারি হা:১৯১০)
এ মাসে জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থা
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল (স) বলেছেন," রমজান মাস এলেই জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তান কে আগুনের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় (বুখারী হা:১৮০০)
রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল (স)বলেন,"রমজানের প্রতিদিন ও রাতে জাহান্নাম থেকে আল্লাহর কাছে বহু বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।তাদের প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যা সে রমজান মাসে করে থাকে।
রোজা জান্নাত লাভের পথ
""""""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল( স) বলেছেন," জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় "রাইয়ান" । কেয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোযাদারগণ প্রবেশ করবে অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। রোযাদারগণ প্রবেশ করলে দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আর কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী হা:১৭৯৭)
রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধের মর্যাদা
"""""""""""""""'""""""""""""""""""""""""""""""
সারাদিন খালি পেটে থাকার কারণে মানুষের স্টোমাক তথা পাকস্থলীর মধ্যে একপ্রকার টক্সিন নামক গ্যাসীয় পদার্থ তৈরি হয়।ফলে রোজাদারের মুখ থেকে এক প্রকার দুর্গন্ধ বের হয়। রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন,"রোজাদারের মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মিশুকের চেয়েও সুগন্ধিময় হবে (বুখারি হা:১৮৯৪)
রোজাদারের জন্য দুইটা খুশি বা আনন্দের সময়
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল (স)বলেন,"রোজাদারের জন্য দুইটা খুশির সময় রয়েছে একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি যখন আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সাথে কেয়ামতের দিন জান্নাতের মধ্যে সাক্ষাৎ করবেন ( বুখারি হা:১৮০৫ )
প্রিয় বন্ধুগণ! এখানে ইফতারের দুইটি অর্থ একটা হচ্ছে ইফতারের সময়। আরেকটি আনন্দ হল ঈদুল ফিতরের সময়।ইফতারের সময় যেই খুশি এটা রোযাদার ছাড়া অন্য কেউ বুঝেনা। সারাদিন রোজা রাখার পরে রোজাদারের সামনে যখন বিভিন্ন রকম শরবত, পেঁয়াজু,ছোলা বুট, খেজুর ইত্যাদি ইফতার রাখা হয়,রোজাদার ইফতারের সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে এবং সেই সময়ের আনন্দময় মুহূর্ত তাদের ছাড়া অন্য কেউ অনুমান করতে পারে না ।সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার খাইতে যে মজা,যারা রোজা রাখে না তারাও কিন্তু রোজাদারের চেয়ে বেশি ইফতার খায়,কিন্তু রোজাদারের মত মজা পায় না । তাদের কাছে ইফতার তেমন লাগে ছাগলে পাতা খেলে যেমন লাগে
ঈদুল ফিতরের সময় যেই মজা রোজাদার পায়, যে রোজা রাখে নাই সে কিন্তু সেই মজা পায় না।কারণ রোজার যে পুরস্কারের কথা ঈদের মাঠে বলা হয় তাতে রোজাদারের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যারা রোজা রাখে না তারা সুন্দর জামাকাপড় পড়ে নামাজের মুছল্লা নিয়ে ঈদের ময়দানে সামনের কাতারে সেন্ট মেখে বসে থাকে।কিন্তু রোজার মর্যাদা তো তাদের জন্য নয় তাদের মনের মধ্যে কিন্তু একটা চোর চোর ভাব থেকেই যায় যে,এ রোজার মর্যাদা তো আমাদের জন্য নয়,ঈদের আনন্দ তো আমাদের জন্য নয় সুতরাং তারা ঈদের সময় আত্মিক কোনো আনন্দ বা মজা পায় না
দ্বিতীয়তঃ আনন্দ হল রোজাদারের সঙ্গে যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পেশালভাবে জান্নাতের মধ্যে সাক্ষাৎ করবে সুতরাং বুঝা গেল রোজাদারের জন্য আল্লাহর স্পেশাল সাক্ষাতের ব্যবস্থা রয়েছে অন্য কারো জন্য নয় এজন্য ওটাই রোজাদারের একটি আনন্দময় মুহূর্ত।
রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
রাসূল (স)বলেছেন," কিয়ামতের দিন রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে,হে আমার রব, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির কামনা হতে বাধা দিয়েছি।সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।আল-কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দেয়নি সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন ফলে এদু'য়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। ( মুসনাদ:৬৬২৬)
সুতরাং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে শেষপর্যন্ত সঠিকভাবে রোজা পালন করার তৌফিক দান করুক।আমীন।
বি: দ্র: তৃতীয় পর্বে রোজার করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ
লেখক: মোহাম্মদ রেজাউল করিম তাওহীদি